একটি পেন্ডিং ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-৫ এবং ৬)
লিখেছেন লিখেছেন mamun ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:১২:২৪ দুপুর
৫.
সারাটা দিন শিহাবের সাথে সাথে রইলো নীলা।
আরো অনেক বন্ধু-বান্ধব থাকার পরেও শিহাব নীলার সাথে সাথে। বন্ধুদের নীরব হাসি এবং কারো কারো স্পষ্ট অন্য ইঙ্গিত- কোনোটারই পরোয়া না করে দুজন সকলের ভিতর থেকেও একান্তে অনেকক্ষণ কাটালো।
সময়গুলো যেন সুপারসনিক জেটে করে চলে গেল।
এরকমই হয়। ভালো সময়গুলো থাকতেই চায় না... বেশীক্ষণ। দুঃসময় যেতে চায় না... যেন থাকে চীরকাল।
স্টেজে উঠে নীলা গাইলো-
‘রোদন ভরা এ বসন্ত...’ সখি কখনো বুঝিনি আমি আগে...’
শিহাবের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়... পুরনো স্মৃতিগুলো ওকে বড় বেশী এলোমেলো করে দিয়ে যায়। নস্টালজিক ভাবনায় বুদ হয়ে থাকে। বিএল কলেজের পিছন দিকের খেয়া ঘাটে একদিনের কথা মনে পড়ে। নৌকায় সে আর নীলা... পরিচিত মাঝি... ফুরফুরে বাতাস... নদীর জলের মন মাতাল করা গন্ধের সাথে ছলাৎ ছলাৎ ছল... বৈঠার একই তালে আওয়াজ ... এসব কিছুকে ছাপিয়ে যায় নীলার কণ্ঠের রবীন্দ্র সঙ্গীত। নদী যেখানটায় এসে ভৈরব থেকে রূপসায় নাম নিয়েছে, সেখানে এসে একবার মনে হল নীলাকে মনের কথাটা বলেই দেয়। কিন্তু প্রকৃতি-নীলা আর ওর মাঝে এমন এক অদৃশ্য দেয়াল তুলে দিলো যে, না বলা কথাটা আর বলাই হল না।
শিহাবকে কয়েকবার মাইকে ডাকা হল।
কিন্তু সে ভাবনায় এমন বুদ হয়েছিল যে শুনলোই না। নীলা এসে ওর কাঁধে হাত রাখতেই চমকে তাকায়।
একটু লজ্জাও পায়। সকলে ওরই দিকে তাকিয়ে আছে দেখে আরো একটু অবাক হয়।
আবারও মাইকে ওর নাম ভেসে আসে। কলেজ জীবনে সে খুব ভাল গান গাইতো। এখন আর চর্চা না থাকায় কোনো অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়ে উঠে না। জেসমিনের অনুরোধে বাচ্চাদের জন্মদিনে তাও একেবারে নিজস্ব মানুষদের সামনে সে গায়। আজ একটু লজ্জা এবং কেমন এক বিব্রত ভাব জাগা মন নিয়ে স্টেজে উঠে গেলো।
নীলার সারা তনুমন কেমন এক ভাললাগার আবেশে জড়িয়ে আছে... শিহাবের সাথে আজ সারাটা দিন থাকার ফলে এই ভাললাগা! আর এখন ওর গলার গান সেটাকে আরো গভীরে নিয়ে যাচ্ছে। নীলার খুব প্রিয় একটা গান সে গাচ্ছে-
‘আবার এলো যে সন্ধ্যা... শুধু দুজনে’
নীলাও শিহাবের প্রিয় একটা গান ইচ্ছে করেই গেয়েছিল।
ও কি সেটা বুঝেছে?
তার প্রমাণ দিতেই কি নীলার পছন্দের গানটি গাইছে?
সব কিছুরই শেষ বলে একটা কিছু থাকে। কিন্তু শেষ হইয়াও হইলো না শেষ... এরকম অনুভুতিতে আচ্ছন্ন নীলা ... কষ্ট পাচ্ছে... একটু পরেই শিহাবকে ছেড়ে যেতে হবে। ইকবাল আসবে ওকে তুলে নিতে। সকালে সে-ই তো ওকে এখানে নামিয়ে দিয়ে গেছে। দুজনেরই মিলনমেলায় আসার কথা ছিল। কিন্তু ইকবাল সোজা না করে দিয়েছে। তবে ওকে দিয়ে যাবার এবং নিয়ে যাবার ব্যাপারে মুখ গোমড়া করে রাজী হয়েছিল।
শিহাব এখন নীলার কাছেই আসছিল। এই মাত্র গান শেষ করে স্টেজ থেকে নেমেছে। বাদলের ডাকে একটু থামল। কিন্তু চোখ আর মন রয়ে গেছে নীলার দিকে। বাদলের মোবাইল নাম্বার নিয়ে হাল্কা দু’একটা কথা বলে দূরে একা বসে থাকা নীলার দিকে তাকায়।
নীলা!
ওর জীবনের এক সময়ের বহু আকাংক্ষিত এক নারী... একজন প্রেমিকা... একজন ছলনাময়ী... এমন এক ছলনাময়ী যাকে পাবার জন্য সমস্ত পৃথিবীটাকে লন্ড-ভণ্ড করে দিতে পারত! মনটা একই সাথে ভাল এবং খারাপ হয়ে গেল। মিশ্র একটা অনুভুতি নিয়ে নীলার সামনে দাঁড়ালো।
নীলা বসে থেকেই ওর দিকে তাকায়।
চোখে চোখে কথা হয়...
নীলার একটা হাত ধরতে ভীষণ ইচ্ছে হয় শিহাবের।
কত কাছে... এইতো পাশে... তবুও...
নীলা বুঝতে চেষ্টা করে শিহাবের মনে কি চলছে। একসময় ওর দিকে তাকালেই সে বুঝতো শিহাব কি চায়। টেলিপ্যাথি জাতীয় কিছু একটা পাওয়ার ছিল নীলার ভিতরে... ভালবাসার উদ্দাম সেই দিনগুলোতে।
কিন্তু শিহাবের সাথে ওর চরম বিশ্বাসঘাতকতা আজ ওর সেই পাওয়ার কেড়ে নিয়েছে। আজ ওর চোখে সে কেবলি এক বোবা ভাষা ছাড়া আর কিছু দেখতে পায় না।
ভালবাসা!
একটুও কি নেই ঐ চোখে?
ওর জন্য...
কেন অতি পরিচিত সেই চোখ দুটিকে আজ গ্রানাইট পাথরের মত লাগছে? ভালবাসা সেখানে আজও রয়ে গেছে... তবে তা ভিন্ন কারো জন্য।
শিহাবের চোখে এখন শুধুই জেসমিন বিরাজমান... এমনটাই মনে হল নীলার।
আরো আধা ঘন্টা একান্তে কাটায় ওরা দু’জন। নীলা ওর বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব শিহাবকে জানায়। শিহাবও ওর এখনকার জীবনের টুকরো কিছু কিছু নীলাকে বলে। একসময় নীলার মোবাইল বেজে উঠে। ইকবালের ফোন। রিসিভ করে... বলে, ‘ আসছি’।
শিহাব নীলার মোবাইল নাম্বার সেভ করে নেয়। ওরটা নীলাকে দেয়। উঠে দাঁড়ায় মুখোমুখি।
নীলা জিজ্ঞেস করে,
: আবার কি দেখা হবে?
: হওয়া কি উচিত?
: তুমি বল!
: জানি না! সময়-ই বলে দিবে।
: আসি তাহলে!?
কিছু বলে না শিহাব। কি বলবে এই কথার উত্তরে... যদি বলে যেও না , নীলা কি থেকে যাবে? আর নীলা থেকে গেলে সে কি ওকে রাখতে পারবে?
অনেক দিনের একটা ইচ্ছে এবং না বলা সেই কথাটি প্রায় মুখ দিয়ে বের হয়েই যাচ্ছিল... নীলার মুখের একটা পাশ আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে বলল-
: কেন নীলা?...
যে কথাটি এতোদিন ধরে হৃদয়ে পাক খাচ্ছিল আজও সেটা পুরোপুরি ওকে বলতে পারলো না। কিন্তু নীলা ঠিকই বুঝে নিলো শিহাব কি বলতে চায়।
ইকবালের গাড়ীর হর্ণ বেজে উঠছে... সামনে দাঁড়িয়ে অটল পর্বতের মত শিহাব... নীলার একসময়ের ভালবাসা যাকে সে ইচ্ছে করে ছেড়ে গেছে...কি বলবে সে ওর প্রশ্নের উত্তরে? নিজেও কি সে জানে কেন সে ছেড়ে গেছে সেই সময় শিহাবকে!
একবুক ভালবাসা নতুন করে উথলে উঠে নীলাকে কাঁদিয়ে দিতে চাইছে... অনেক কষ্টে সেটা দমিয়ে একবারও শিহাবের দিকে না তাকিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেলো। ইকবাল সেখানে অপেক্ষা করছে।
একটা অতীত বর্তমানে এসে শিহাবকে নস্টালজিক করে দিয়ে গেলো । ওরই সামনে দিয়ে সেই আগেরবারের মতো নীলা ইকবালের সাথে চলে যায়।
অনেকক্ষণ শিহাব চেয়ে থাকল ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া ওদের গাড়ীর টেইললাইট এর দিকে... একসময় ঝাপসা হয়ে গেল সামনেটা...
৬.
মিলনমেলা থেকে ফিরে দু’টো দিন শিহাবের কেমন এক ঘোরের ভিতর কাটে। জেসমিনও ওর বন্ধুটির এই এলোমেলো অবস্থা লক্ষ্য করে। কিছুটা এলোমেলো সে আগেই ছিল...কিন্তু হঠাৎ করে মানুষটির এই বৈসাদৃশ্য এবং ভাবান্তর ওকে অবাক করলেও কিছু জিজ্ঞেস করে না। স্বাভাবিক ভাবে দিন দু’টি কেটে যায়।
এর ভিতরে নীলা বেশ কয়েকবার শিহাবের নাম্বারে ফোন দেয়। ওরা অনেক্ষণ কথা বলে। মোবাইলের ভিতরে সেই আগের নীলা যেন নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। শিহাব নিজের ভিতরে বিজয়ের আনন্দ অনুভব করে। একটা আজন্ম লালিত অতৃপ্তি যেন তার শেষ প্রান্তে এসে কিছু দেবার অপেক্ষায়। এখন শুধু শিহাবের নেবার পালা।
অফিসের কলিগেরাও শিহাবের এই পরিবর্তন লক্ষ্য করে। কারো ভিতরের আনন্দ কি সহজে চেপে রাখা যায়? তবে এই উজ্জ্বলতার ভিতরেও কোথায় যেন একটা জমাট অন্ধকারও রয়ে গেছে। শিহাব যেন দুই নৌকায় পা দেয়া একজন অস্থির মানুষ- যে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি করবে। কাজে বেশ বড় ধরণের একটা ভুল করে ফেললো।
বসের রুমে ডাক পড়ে।
এবারই প্রথম... কাজের ভুলের জন্য। বস ওকে খুব ভালবাসেন। ওর মতো পাংচুয়াল এবং নিষ্ঠাবান অফিসার খুব কমই আছে। এটা ওর বস ভাল করেই জানেন। কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলেন নীরবে। শেষে বললেন, ‘ দু’টো দিন বরং ছুটি নিয়ে নাও।‘ শিহাবও মৃদু স্বরে সম্মতি জানিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো।
হানিফ বাসে সামনের দিকে বাম পাশের একটি সীটে বসেছে শিহাব। ওর পাশে এক বয়স্ক ভদ্রলোক। বাস ভর্তি মানুষ। প্রায় সবাই ই কথা বলছে। বাইরে অন্য গাড়ির আওয়াজ-হর্ণ আর প্রচুর ধুলা উড়ছে। ওর পিছনের সীটে একজন মোবাইলে চীৎকার করে কথা বলছে। ফোনের ওপাশের ব্যক্তির কানের বারোটা বেজে যাচ্ছে হয়তো। এরই ভিতরে মসজিদের চাঁদা নিতে একজন এলো। তাকে বাসের ড্রাইভার এবং হেল্পার তো উঠতেই দিবে না। তারপরও কীভাবে যেন উঠে পড়ল।
এই ই জীবন... একটা প্রচন্ড গতি।
গতিই কি জীবন?
নচিকেতার ‘ অন্তবিহীন পথা চলাই জীবন’ গানের কথা মনে পড়ে গেল। গতি যদি জীবন হয়, তবে চলার পথে থেমে থাকাকে কি বলা যাবে? আর শুধু অন্তবিহীন পথে চললেই কি হবে? একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে না? ওর জীবনের কি লক্ষ্য? সংসার জীবনে নিরলস সংগ্রাম করে শান্তিকে অর্জন করা। আর এটা দুই কন্যা আর জেসমিনকে ঘিরেই কি নয়? তবে এর ভিতরে নীলার স্থান কোথায়? কেন আজ দু’দিন সে বিজয়ের আনন্দে ভাসছে তার অবচেতন মনে?
নিজের প্রশ্নের উত্তরে ‘ আমি জানি না ... আমি জানি না’ বলে উঠে মনে মনে। পাশের ভদ্রলোক একটু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালেন। মনের কথা একটু জোরে মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো কি? ওকে কি ভাবলেন ভদ্রলোক?
বিদ্যুৎ চমকের মতো অন্য একটি চিন্তা হৃদয় থেকে ব্রেইনে চলে যায়। নীলার কথা এবং এখনকার অনুভুতি জেনে জেসমিন কি ভাববে? সে কি নীলার কথা সব জানাবে জেসমিনকে? জানানো কি ঠিক হবে?
কেন ঠিক হবে না। নীলাকে নিয়ে ওর কোনো গোপন অভিসন্ধি তো নেই... তবে ওর ভয় কিসের? কিন্তু মনের গহীনে ওই যে ‘বিজয়ের আনন্দ’ সে অনুভব করেছিল, ওইটাই হল অপরাধবোধ। ওর হৃদয় জুড়ে এখন থাকবে শুধু জেসমিন... আনন্দও থাকবে জেসমিনকে ঘিরে। সে কোনো ভান বা মিথ্যে একেবারেই পছন্দ করে না। তবে কেন আজ জেসমিনের সাথে এতোগুলো বছর কাটিয়ে ভান করবে...
মোবাইলে ভাইব্রেশন দেয়া ছিল। স্ক্রিনে দেখে নীলার নাম্বার। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠ এই গাড়ীর আওয়াজের ভিতরেও স্পষ্ট শুনতে পেল-
: হ্যালো!
: হ্যা, শুনছি... বল।
: অফিসে?
: না, বাসায় ফিরছি। গাড়িতে।
: অসময়ে বাসায়? শরীর খারাপ?
: না, কি বলবে বল।
: তোমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি! অ্যাক্সেপ্ট করো...
: বাসায় যেয়ে নেই।
মিলনমেলায় শিহাব মোবাইল নাম্বার দেবার সময় ওর ফেসবুক আইডিও দিয়েছিল। মোবাইলের সুইচ অফ করে সীটে হেলান দিয়ে রিল্যাক্স করে। হানিফ পরিবহনের এই বাসটি দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে অন্তবিহীন পথে।
... ... ...
অনেক রাতে...
দুই বাচ্চাকে পাশে নিয়ে জেসমিন শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। কি মায়া নিয়ে ওরা তিনজন ঘুমের ভিতরেও শিহাবকে আকর্ষণ করে চলেছে। চোখ আর ফিরাতে পারে না। কিছুক্ষণ আগে নারী-পুরুষের স্বাভাবিক লেনদেন এর সময়ও এই মায়াটা দেখতে পায়নি শিহাব। তখন আসলে দেখার কিছু থাকেও না। মায়া হয়তো ঠিকই ছিল!
ল্যাপটপটা বুকের উপরে রয়েছে।
ওটার থাকার কথা কোলের উপরে। কিন্তু এমন পজিশনে সে শুয়ে আছে যে বুকের উপরেই পারফেক্ট। একটা ব্যাপার নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছে সে।
নীলা...
রত্নের মতোই এই মানবী নীলা ওর জীবনে স্যুট করে নাই। আগেও না... এখনো করবে না... আর ভবিষ্যত তো বর্তমানই নির্ধারণ করবে।
একসময় পাগলের মতো নীলাকে ভালবেসেছে। সেও প্রথম দিকে ওর সাথে তাল মিলিয়েছে। কিন্তু পরে ওকে ছেড়ে ইকবালের হাত ধরে ঘর বেঁধেছে। এখন আবার ওর কাছে সে ফিরে আসতে চাইছে। সেদিন নীলার সাথে ইকবালের বর্তমান বিহেভ সব-ই ওকে নীলা অকপটে জানিয়েছে। কি যন্ত্রণার ভিতরে সে আছে সেটাও শিহাব বুঝতে পারছে।
কিন্তু আজ নীলার জন্য ওর হৃদয়ে আসলে কোনো কিছুই নেই। এটা সে একটু আগে বুঝতে পেরেছে। হৃদয় একটা নরম জিনিস হলেও সেটা বার বার কাউকে দেয়া যায় না। ওর হৃদয়ে এখন শুধুই জেসমিন... ঘুমন্ত জেসমিনের দিকে তাকিয়ে শিহাব ওর হৃদয়ের গভীরতাকে আরো ভালভাবে অনুধাবন করে। একটু ধরতে ইচ্ছে করে... ঘুম থেকে জাগিয়ে বুকে টেনে নিতে ইচ্ছে করে!!
কিছুক্ষণ আগে নীলা শিহাবের মোবাইলে ফোন করেছিল। ওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করার জন্য দ্বিতীয়বার অনুরোধ করে। আচ্ছা দেখি বলে ফোন রেখে দিয়েছে শিহাব।
ওর সামনে নীলার পেন্ডিং ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট...
পাশে ঘুমন্ত জেসমিন...
মনের চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পায় সেখানে দাঁড়ানো পিছনে নীলার অতীত...
বর্তমানের নীলা এক অসহায় নীলা। সে জীবনের এই প্রান্তে এসে তার হৃদয় যে মানুষটিকে দিয়েছিল বিশ্বাস করে- তার দ্বারাই নিঃশেষ হচ্ছে প্রতি নিয়ত। এখন আবার ফিরে আসতে চাচ্ছে ওকে যে ভালবাসতো তার কাছে। কিন্তু সে যে এখন আর তার নেই। জেসমিন নামের আর এক ফুলের সাথে সে জড়িয়ে আছে... ভালবাসার বন্ধনে।
যে বাঁধন নীলা ইচ্ছে করেই খুলে পালিয়েছিল।
আজ তার হৃদয়ে আদৌ কি কারো জন্য ভালবাসা রয়েছে?
এক হৃদয় ক’জনকে ভালবাসতে পারে?
শিহাবের হৃদয়ে নীলার জন্য এখন এক বিশাল শুন্যতা ছাড়া কিছুই নেই।
ওর ফেসবুক আইডিতে নীলা নামের একজনের একটি পেন্ডিং ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট থেকেই যায়!
... ... ...
নীলা ওর আনন্দের সেই একমাত্র জায়গা বারান্দায় বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে শিহাবকে ফোন করেছিল। দায়সারাভাবে উত্তর দিয়ে সে ফোন রেখে দিয়েছে। ওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও অ্যাক্সেপ্ট করে নাই। করলে এতক্ষণে করেই দিতো।
একটা প্রচন্ড কষ্ট বুকের ভিতর থেকে উঠে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আবার বুকের ভিতরেই ফিরে গেল।
একটু হাসল নীলা...
সেই বা কি অদ্ভুদ ভাবে শিহাবের কাছে কিছু একটা চায়?
আজ যে কষ্ট সে অনুভব করছে এর সবটুকুই কি তার নিজের তৈরী নয়?
কেন তবে শিহাবকে দোষ দিবে?
নাহ! সে শিহাবকে দোষ দিচ্ছে না। সে কাউকেই এখন আর দোষী মনে করে না। সবাই ই যার যার যায়গায় ঠিক আছে।
একবার প্রিয় যায়গাটি ভালভাবে দেখে... বাইরের আকাশ এবং সেখানে থালার মতো চাঁদকেও মন ভরে দেখে নিলো। একটা সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে সে নিয়ে নিয়েছে... মুখে একটু মৃদু হাসি ফুটে উঠলো।
ধীর পায়ে ইকবালের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
এই প্রথম মনে হয় অনেক বছর পরে ইকবালের রুমের দিকে আনন্দ নিয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে সে।
পিছনে অনেক কিছুর সাথে রেখে যাচ্ছে ওর ভালবাসার একজন মানুষের প্রতি পাঠানো একটি ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’।।
(সমাপ্ত)
বিষয়: সাহিত্য
১০৩০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি তো আমার নিকটি বাংলায়ই দেখছি। সব ক'টি পোষ্টের হেডিঙে ও তো মামুন লেখা দেখতে পাচ্ছি।
জানি না আপনি বা অন্যরা কি দেখছেন।
অনেক শুভেচ্ছা আপনাদের দুজনের জন্য।
শুভেচ্ছা রইলো।
আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরুষ্কার দান করুন, আমীন
আল্লাহপাক আপনাকেও অনেক উত্তম বদলা দান করুন-আমীন।
লেখকের পজিটিভ দৃষ্টি নিয়ে এই লেখাটি লিখেছি।
তাই কিছু ভাঙার পরিস্থিতি তৈরী হয়নি।
শুভেচ্ছা রইলো অনেক অনেক।
ইচ্ছে করলেই কি এমন করা যায়............!!
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন